রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা বলতে কিছু নেই, পুলিশ নিষ্ক্রিয়, সমাজদ্রোহীদের হাতে প্রশাসন : বিরোধী দলনেতা
নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা ৩ সেপ্টেম্বর : গত সাড়ে সাত বছরে ত্রিপুরা রাজ্যের মানুষ খুন সন্ত্রাস আর ভয়ভীতির রাজনীতি দেখেছে। গনতন্ত্রকে কিভাবে পায়ে মারিয়ে মানুষের কন্ঠকে স্তব্ধ করা যায় তার জ্বলন্ত উদাহরন প্রত্যক্ষ করেছে এরাজ্যের মানুষ।
বিজেপি দল ও সরকার সবটাই পরিচালনা করছে একাংশের সমাজদ্রোহীরা। দলের ভেতরে যেমন কোনো শৃঙ্খলা নেই তেমনিভাবে রাজ্যে আইন শৃঙ্খলার অবশেষ আর কিছু নেই, বক্তা রাজ্যের বিরোধী সলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী।
গতকাল নতুননগরে সিপিআইএমের সভা বানচল করতে তাদের দলীয় অফিসে হামলা, গত পরশু রাতে বিধায়কদের সরকারি আবাসে ঢুকে মথার বিধায়ককে প্রানে মারার হুমকি প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে বুধবার সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক তথা বিরোধী দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী একথাগুলি বলেন।
তিনি বলেন, ত্রিপুরায় আইনশৃঙ্খলার কোনো পরিবেশ নেই। পুলিশ নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। এমনকি, পুলিশের একাংশ দলদাসে পরিণত হয়েছে। শ্রী চৌধুরী বলেন, গতকালের ঘটনা থেকে স্পষ্ট যে প্রশাসনের পাশাপাশি দলের কর্মীদের উপর নিয়ন্ত্রণ নেই শাসক দল বিজেপির। এমনকি, বিজেপির জোট শরিক তিপরা মথার সঙ্গে সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। এককথায়, গোটা রাজ্যে অরাজকতার পরিবেশ চলছে।
সিপিএমের জনসভা বানচাল করার জন্য হামলা চালিয়েছে বিজেপির দুষ্কৃতকারীরা। কারণ, তাঁরা বুঝতে পেরেছেন দিনে দিনে তাঁদের পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে। যার ফলে জনসম্মুখে বিজেপি নেতৃত্বরা আবোল তাবোল গল্প বলছে, বলে দাবি করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, মুখ্যমন্ত্রী ডা: মানিক সাহা নিজের দূর্বলতা উপলব্ধি করতে পারছেন না। তিনিও জনসম্মুখে নিজের ব্যর্থতা প্রকাশ করছেন।
বিগত দিনে অনেকবারই মুখ্যমন্ত্রীকে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছিল যে নিজের দলের লোকজনই মুখ্যমন্ত্রীকে গদি থেকে টেনে নামানোর চেষ্টা করছে। এখনো বিজেপি দলে গোষ্ঠী কোন্দলে নিজেদের মধ্যে চুল টানাটানি চলছে। মুখ্যমন্ত্রী বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীর কাছের লোকেরাই ষড়যন্ত্র করছে। একজন শিক্ষিত নিপাট ভদ্রলোক এখন বলছে সিপিআইএম নাকি রাজ্যের উগ্রপন্থীদের জন্মদাতা।
আসলে গদি হারানোর ভয়ে তিনিও অবসাদে ভোগছেন। ত্রিপুরার ইতিহাস ভুগোল জানা থাকলে এমন কথা তিনি বলতেন না। রাজ্যের মানুষ জানেন কিভাবে কারা ত্রিপুরায় উগ্রবাদের আশ্রয় নিয়ে বামপন্থী আন্দোলনকে দুর্বল করার প্রয়াস নিয়েছিলো। রাজ্য থেকে উগ্রপন্থার অবসান ঘটাতে বামফ্রন্ট সরকার, এরাজ্যের আপামর শান্তিপ্রিয় মানুষ ও টিএসআর সহ ত্রিপুরা পুলিশ প্রশাসনের ভুমিকা অস্বিকার করতে পারবে না কেউ। কিন্তু বর্তমানে ফের একবার ততকালীন যারা টিইউজেএস নামে পরিচিত ছিলো তাদেরই উত্তরসুরীরা তিপরা মথার নাম নিয়ে একটা অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা চলাচ্ছেন।
তারাই আবার রাজ্য সরকারের শরিক দল। তাদের মধ্যেও সম্পর্ক আজ ভালো তো কাল মন্দ। এই মথার বিধায়ককেই আবার বিজেপির এক প্রথম সারির নেতা বর্তমানে বিশাল সংসদীয় পদের অধিকারির শ্রীমান নেশাগ্রস্ত হয়ে প্রাননাশের হুমকি দিচ্ছে৷ এতে করে সহজেই বুঝা যাচ্ছে রাজ্যের রাজনৈতিক প্রশাসনিক পরিমন্ডল কোন পথে ধাবিত হচ্ছে। ফলে রাজ্যের মানুষকে বিভ্রান্ত হলে চলবে না ।
আগামী দিনে পাহাড়ে ভিলেজ ভোটে এবং ২০২৮ এ রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে তাদের মুখ আর মুখোশের আড়ালের চেহারাটাকে চিনে পরখ করে মতামত প্রদান করতে হবে। তবেই একটা গনতান্ত্রিক, সমাজব্যাবস্থা ফিরে আসতে পারে রাজ্যে। মথা বিজেপির জনজাতি দরদের আসল চেহারা দেখতে হলে এখন আর পাহাড়ে যেতে হবে না।
শহরে বসেই তা অনুধাবন করা যায়, যখন প্রতিদিন সুদুর পেচারথল, মাছমারা, দশদা, গন্ডাছড়া,কাঞ্চনবাড়ি, ইত্যাদি এলাকা থেকে জনজাতি মা বোনেরা দু চার ছড়ি কলা, বাশের কুরুল, কলার মোচা, ইত্যাদি নিয়ে রাজধানী শহরে চলে আসেন দুটি পয়সা রোজগারের আশায়। সারাদিন রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে সামান্য কিছু অর্থ উপার্জন করে সন্ধ্যায় রেলে করে বাড়ি ফিরেন।এই ঘটনায়, তাদের জীবন মান কোন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে তা সহজেই অনুমান করা যায়।
পরিবারের পেট বাচাতে কতনা পিরিশ্রম করতে হয় তাদের। আর তিপরা মথা ও বিজেপির নেতারা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে জনজাতি দরদ আর গ্রেটার তিপ্রাল্যান্ডের স্বপ্ন বিলী করে ক্ষমতা দখল করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনেছেন। ফলে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে মথার সুপ্রিমো ও নেতাদের এসব জনজাতি মা বোনেদের চোখে চোখ রেখে কথা বলতে হবে।
অন্যথায় তাদের জোগ্য জবাব মানুষ ভোট বাক্সে দিতে প্রস্তুত হয়ে আছেন বলেও দাবী করেন বিরোধী দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী।