সরকারি নজরদারির অভাবে কৃষি জমি জলের তলায় কৃষকের চোখে জল!
ত্রিপুরার ঊনকোটি জেলার কুমারঘাট কৈলাশহর অঞ্চলে জাতীয় সড়ক উন্নয়ন করতে গিয়ে বিপাকে ফেলেছেন কৃষকদেরকে। বহিরাজ্যের এক নির্মাণ সংস্থা কোটি কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে রাস্তা বানিয়েছে, কিন্তু বর্ষায় বৃষ্টির জলের নিষ্কাশনের করার ব্যাপারে সঠিক পদক্ষেপ নেননি । এর ফল ভুগছেন সাধারণ কৃষক—চাষের জমি এখন জলমগ্ন , চাষ পুরোপুরি বন্ধ। অথচ রাজ্য সরকার এবং NHIDCL এর মতো দপ্তর চুপ করে বসে আছে ! প্রশ্ন উঠছে , এই চরম উদাসীনতা ও গাফিলতির দায় কে নেবে ?
২০২০ সাল থেকে NHIDCL-এর অধীনে সতীশ প্রসাদ নামের বহির রাজ্যের নির্মাণ সংস্থাকে দেওয়া হয় কুমারঘাট-কৈলাশহর বিকল্প ২০৮ নং জাতীয় সড়কের ১৮.৬ কিমি রাস্তায় কাজের দায়িত্ব, যার ব্যয় ১২৭.৬৮ লক্ষ টাকা । পাশাপাশি ফুলতলী রোড (৮.১ কিমি) ও কমলপুর-শ্রীরামপুর সংযোগকারী ১২ কিমি সড়ক মিলে আরও ১৪৬.৭৩ লক্ষ টাকার কাজ।
কিন্তু এই বিপুল ব্যয়ের কাজগুলি কতটা যাচাই করে দেওয়া হয়েছে ? কে দেখেছে রাস্তা নির্মাণ ও কালভাট নির্মাণের ফলে কৃষকদের জলসেচ ও নিষ্কাশনের জন্য সঠিকভাবে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে কি না ? প্রশাসনের চোখ বুজে থাকা ও নির্মাণ সংস্থার রাতারাতি কাজ সম্পন্ন করে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়া , এসবই ইঙ্গিত করে বড়সড় দুর্নীতির দিকে ।
সোনাইমুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কৃষকরা জানিয়েছেন, প্রায় ২০ কানির বেশি জমিতে জল জমে থাকে সারা বছর। চাষ বন্ধ । বৃষ্টির জল বের হবার জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই। নির্মাণের আগে বা পরে কেউ একবারও এলাকাবাসীর সঙ্গে আলোচনা করেনি । এই বিষয়ে কৃষকরা বারবার জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। কিন্তু ফলাফল শূন্য । উনো পদক্ষেপ নেয়নি প্রশাসনের পক্ষ থেকে। অথচ এই জমি ছিল ওই অঞ্চলের কৃষকদের জীবন জীবিকা একমাত্র অবলম্বন। নির্মাণ সংস্থার উপরে দায়িত্ব ছিল পাঁচ বছরের জন্য রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণ দায়িত্ব। কিন্তু ২০২০ সাল থেকে আজ পর্যন্ত রাস্তায় একটাও মেরামতি হয়নি। কৈলাশহর-কুমারঘাট মেইন রোডে বড় বড় গর্তে দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে । কয়েকজন প্রাণ হারিয়েছেন বলেও দাবি করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা । তাহলে রক্ষণাবেক্ষণের টাকা গেল কোথায় ? কে দেখছে নির্মাণ সংস্থা এই চুক্তি রক্ষা হচ্ছে কিনা ?
সবচেয়ে বড় প্রশ্ন — এই দুর্দশার দায় কার ? রাজ্য সরকার নাকি NHIDCL সংস্কার ?
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা এখন মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। তাঁরা চাচ্ছেন , এই নির্মাণ সংস্থার বিরুদ্ধে অবিলম্বে তদন্ত শুরু হোক, ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক কৃষকদের , এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রকল্পে কঠোর নজরদারি নিশ্চিত করা হোক।
উন্নয়নের নামে যদি সাধারণ মানুষের জীবন ও জীবিকা ধ্বংস হয়, তবে সে উন্নয়ন নয়—সেটা রাজ্য সরকারের ব্যর্থতা ।