পাহাড়ের কোলে শিক্ষার দীপ্ত আলো, পিএমশ্রী হাজাছড়ি বিদ্যালয়ের শিক্ষার জয়যাত্রা
নিজস্ব প্রতিনিধি- প্রসেনজিৎ বৈদ্য, সাব্রুম।
রাজ্যের প্রত্যন্ত পাহাড়ি জনপদে অবস্থিত একটি বিদ্যালয় যেন শিক্ষার এক নিঃশব্দ বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছে। করবুক মহকুমার অন্তর্গত হাজাছড়ি গ্রামে অবস্থিত পিএমশ্রী হাজাছড়ি দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয় এখন শুধু একটি স্কুল নয়, বরং একটি অনুপ্রেরণার নাম।
২০২৩ সালে এই বিদ্যালয়টি ‘পিএমশ্রী বিদ্যালয়’-এর মর্যাদা পায়। কিন্তু তার বহু আগেই বিদ্যালয়টি তার নিজস্ব প্রচেষ্টায় গড়ে তুলেছে এমন এক ঐতিহ্য, যা আজ রাজ্যের গর্ব। বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ধারাবাহিকভাবে ১০০ শতাংশ পাশের নজির গড়ে আসছে।
বর্তমানে বিদ্যালয়ে ৪২২ জন ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করছে, যাদের জন্য রয়েছেন মাত্র ১৬ জন নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক ও শিক্ষিকা। ছাত্রীদের জন্য রয়েছে একটি হোস্টেলের ব্যবস্থাও, যেখানে ১৫০ জন ছাত্রী থেকে থেকে শিক্ষা গ্রহণ করছে—এ এক বিরল চিত্র পাহাড়ি জনপদের প্রেক্ষাপটে।
বর্তমান সময়ের চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যালয়টিতে চালু হয়েছে অনলাইন শিক্ষার ব্যবস্থা, স্মার্ট টিভি ও লাইভ ক্লাসের মাধ্যমে। ছাত্রীদের মতে, লাইভ ক্লাসে তারা পাঠ্য বিষয়গুলি আরও সহজভাবে বুঝতে পারছে এবং সরাসরি শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে প্রশ্নোত্তর পর্বে যুক্ত হতে পারছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দোয়াং মগ বলেন, “আমরা সবাই একসঙ্গে চেষ্টা করছি যাতে আমাদের ছাত্রছাত্রীরা আরও ভালো ফলাফল করতে পারে। শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে আমরা যোগ ও প্রাণায়ামের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি।”
তবে চিত্রটা একেবারে নিখুঁত নয়। তিন বছর ধরে বিদ্যালয়ে নেই কোনো পোস্ট গ্রাজুয়েট শিক্ষক। বিল্ডিং-এর অভাবে চলছে সমস্যা, পুরনো ঘরেই কোনো রকমে চলছে ক্লাস। বিজ্ঞান ল্যাব গড়ে তোলা যাচ্ছে না যথাযথভাবে। অথচ ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান শিক্ষক কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, যাতে বিদ্যালয়টির জন্য একটি নতুন ভবন বরাদ্দ করা হয়। কারণ এই পাহাড়ি জনপদের শিক্ষার স্বপ্ন যেন কোনও অভাবেই থেমে না যায়।
পিএমশ্রী হাজাছড়ি বিদ্যালয় আজ পাহাড়ের বুক থেকে এক নিঃশব্দ শিক্ষা বিপ্লবের বার্তা দিচ্ছে- প্রতিকূলতাকে জয় করে আলো ছড়ানো সম্ভব, যদি থাকে নিষ্ঠা, প্রচেষ্টা আর একটু সহায়তা।