তরুণী গৃহবধূ পনের শিকার হয়ে আত্মঘাতী হলো। বিয়ের তিন মাসের মাথায় বাপের বাড়ি থেকে দুই লক্ষ টাকা এনে দেওয়ার জন্য শ্বশুরবাড়িতে চলে চরম অত্যাচার। এরই জ্বালা সহ্য করতে না পেরে রেলে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করলো এই তরুণী গৃহবধূ। ঘটনা উত্তর ত্রিপুরা জেলার চুরাইবাড়ি থানাধীন গোবিন্দপুর এলাকার ছয় নং ওয়ার্ডে। সেখানের বাসিন্দা বেনু শুক্লবৈদ্য ও মিরা শুক্লবৈদ্যের মেয়ে মনিকা শুক্লবৈদ্য ২০২৩ সালে সামাজিক রীতি অনুযায়ী কৈলাসহরের ভাগ্যপুর গ্ৰামের শশধর শুক্লবৈদ্যের ছেলে শঙ্কু শুক্লবৈদ্যের সঙ্গে বিবাহ হয়। বিয়ের যথারীতি তিন মাস পর থেকেই শ্বশুর শশধর, শ্বাশুড়ী মুক্তা শুক্লাবৈদ্যের সহযোগিতায় স্বামী শঙ্কু শুক্লবৈদ্য গৃহবধূ মনিকার উপর চরম অত্যাচার শুরু করে পনের দায়ে। তখন বলা হয় বাপের বাড়ি থেকে দুই লক্ষ টাকা এনে দেওয়ার জন্য। অথচ গৃহবধূর স্বামী ভারতীয় সেনাবাহিনীতে চাকুরীরত। ইতিমধ্যে গৃহবধূ সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। তখন সে শ্বশুর বাড়ির জ্বালা সহ্য করতে না পেরে অন্তঃসত্তা অবস্থায় বাপের বাড়িতে চলে আসে। সেখানে তাদের একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। এরই মধ্যে দু’পক্ষের মাতব্বরদের মধ্যস্থতায় একাধিকবার শালিশিসভার মাধ্যমে গৃহবধূকে ফের স্বামীর বাড়িতে নেওয়া হয়। তখন দেখা যায় শুধু পনের জ্বালাতন নয়, ভারতীয় আর্মিতে চাকুরীরত এই জোয়ান একাধীক মেয়ের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত রয়েছে। এতে অনেক অশ্লীল ছবিও তার মোবাইলে দেখতে পেয়ে তার স্ত্রী মনিকা বারবার প্রতিবাদ করলে সে তার স্ত্রীকে প্রচন্ড মারধর করে বলেও অভিযোগ গৃহবধূর বাপের বাড়ির লোকজনদের। এতে সে পুনরায় বাপের বাড়িতে চলে আসে। এমতাবস্থায় শঙ্কু ফের তার কর্তব্যে বহিঃরাজ্যে চলে যায়। দীর্ঘ মাস পর চলতি মাসের ১৮ তারিখ শঙ্কু ও ওপর এক ব্যক্তি তার গোবিন্দপুরস্থিত শ্বশুরবাড়িতে আসে এবং সেখানে এসে গৃহবধূ মনিকাকে চরম মারধর করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। সেই দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করে রাখে গৃহবধূ মনিকা। এরপর থেকেই মনিকা চরম অপমানিত হয়ে নিজেকে শেষ করে দেওয়ার চরম সিদ্ধান্ত নেয়। ঐদিন অর্থাৎ ১৮ই এপ্রিল সন্ধ্যা রাত্রে সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় এবং চলতি ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে। পরদিন রেল পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে ধর্মনগর জেলা হাসপাতালের হাতে সমঝে দেয়। বর্তমানে মৃত গৃহবধুর দুই বছরের একটি ফুটফুটে সন্তান রয়েছে। এই মর্মে গৃহবধূর মা মিরা শুক্লাবৈদ্য সমস্ত ঘটনা জানিয়ে চুরাইবাড়ি থানায় লিখিত মামলা দায়ের করেন। ওসি খোকন সাহা মামলা নম্বর ১২/২৫ অনুযায়ী ভারতীয় নেয়ায় সংহিতার ৮৫/৮০/৩(৫) ধারায় মামলা রুজু করেছেন এবং এই মামলার তদন্তে রয়েছে মহকুমা পুলিশ আধিকারিক বি জেরিন পুইয়া। এখন দেখার মৃত গৃহবধুর অনাথ সন্তান ও তার পরিবার কি আইনী ন্যায়বিচার পায়।