তেলিয়ামুড়া মহকুমা হাসপাতালে ফের একবার চিকিৎসা ব্যবস্থার গাফিলতির করুণ চিত্র সামনে এলো। মাত্র ১৪ মাসের এক শিশুর মৃত্যু ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। অভিযোগ, হাসপাতালের একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের উদাসীনতা ও নির্লিপ্ত মনোভাবের ফলেই অকালে ঝরে গেল শিশুটির জীবন।
জানা গেছে, অনুজ দেববর্মা নামে ওই শিশুটিকে গুরুতর শ্বাসকষ্ট নিয়ে ওম্পি নগর হাসপাতাল থেকে সন্ধ্যা ৮টা ১৫ মিনিট নাগাদ তেলিয়ামুড়া মহকুমা হাসপাতালে রেফার করা হয় উন্নত চিকিৎসার জন্য। শিশুটির পিতা বিশ্বজিৎ দেববর্মা জানান, হাসপাতালে উপস্থিত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. উত্তম কুমার বর্মনের তত্ত্বাবধানে প্রায় এক ঘণ্টা চিকিৎসার জন্য অপেক্ষা করলেও কোনো সুনির্দিষ্ট ও কার্যকর চিকিৎসার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
অভিযোগ আরও গুরুতর, কারণ হাসপাতাল চত্বরে দুইজন শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকলেও, ডা. উত্তম কুমার বর্মন তাঁদের কাউকেই পরিস্থিতি জানিয়ে পরামর্শ নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি। এতে চিকিৎসা বিলম্বিত হয় এবং এক পর্যায়ে শিশুটির শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। শেষে রেফার করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও, পরিবার আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে আগরতলার জিবি হাসপাতালে নিয়ে যেতে ব্যর্থ হয়।
চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই শিশুটি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। হাসপাতালে কর্মরত একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, সাংবাদিকদের আগমনের আগে মাত্র ১০ মিনিটের ব্যবধানে শিশুর মরদেহ বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন চিকিৎসক, যা এই মৃত্যুকে ঘিরে সন্দেহ আরও বাড়িয়ে তোলে।
স্থানীয়দের মতে, হাসপাতালের দুই শিশু বিশেষজ্ঞদের মধ্যে একজন ডা. প্রণয় দাস হাসপাতালের কোয়ার্টার কমপ্লেক্সেই অবস্থান করেন এবং অন্যজন, ডা. সুকন্যা দাস, নিজের সুবিধামতো সময়েই হাসপাতালে উপস্থিত হন। অভিযোগ উঠেছে, ডিউটি সময় বাদে তাঁকে স্থানীয় একটি ওষুধের দোকানে বাণিজ্যিক চিকিৎসা পরিষেবা দিতে দেখা যায়। এইসব ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠছে—দায় নেবেন কে?
এই ঘটনার পর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ। তাঁদের মতে, মহকুমা হাসপাতালের পরিকাঠামোগত উন্নয়ন যতই হোক, যদি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা নিজেদের দায়িত্ব সচেতনভাবে না পালন করেন, তবে উন্নয়নের প্রকৃত উদ্দেশ্য ব্যর্থ হবে।
এখন দেখার বিষয়, এই ঘটনার প্রেক্ষিতে তেলিয়ামুড়া বিধায়িকা কল্যাণী সাহা রায় কী পদক্ষেপ নেন এবং হাসপাতালের স্বাস্থ্য পরিসেবা উন্নয়নের জন্য কী ধরনের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।