বক্সনগর ব্লক অধীনস্থ পুটিয়া গ্রামের ফরিদ মিয়ার ছেলে হাফিজ মিয়ার সাথে আনন্দ নগর এলাকার মফিজ মিয়ার মেয়ে রেহানা আক্তারের প্রায় ১৪ বছর আগে সামাজিক রীতিনীতি মেনে বিবাহ সম্পন্ন হয়েছিল। শুরুতে সুখী দাম্পত্য জীবন ছিল তাদের।সংসারে তিনটি কন্যা সন্তানের জন্ম হলেও তাদের পরিবারের যেন সুখের ছোঁয়া লেগেছিল।কিন্তু এই সুখ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি।কিছুদিন পর থেকে স্বামী হাফিজ মিয়া মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন।প্রতিদিন মাদক সেবন করে ঘুরে ফিরে স্ত্রীর প্রতি অত্যাচার শুরু করেন।স্ত্রী রেহেনাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল থেকে শুরু করে শারীরিক নির্যাতন পর্যন্ত চালাতেন তিনি।এমনকি একাধিকবার স্ত্রীর বাবার সামনেই তাকে ঘর থেকে বের করে রাস্তায় নিয়ে মারধর করেছেন।স্বামী হাফিজের দাবি ছিল রেহেনা যেন বাবার বাড়ি থেকে দুই লক্ষ টাকা যৌতুক নিয়ে আসে।এই নিয়ে তাদের মধ্যে প্রায়শই ঝগড়া হতো।
এলাকার প্রধান উপপ্রধানের মাধ্যমে সামাজিকভাবে সমস্যার সমাধান করা হলেও কিছুদিন পর হাফিজ মিয়া আবারও আগের মত অত্যাচার করতে থাকে।সূত্র মতে হাফিজ মিয়ার অন্য এক নারীর সাথে অবৈধ সম্পর্কও ছিল,তা নিয়ে দাম্পত্য জীবনে আরো অশান্তি বাড়ে। বিষয়টি নিয়ে রেহেনা কলমচৌড়া থানায় মামলাও করেন।মামলা চলাকালীন হাফিজ মিয়া প্রায় প্রতিদিন রেহেনার মোবাইলে ফোন করে তাকে গালাগাল করতেন এবং মেরে ফেলার হুমকি দিতেন। এভাবে মানসিক যন্ত্রণা বাড়তে থাকে রেহানার।স্বামীর এই নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে গত ১৯শে সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার বিকেল ৫ টার সময় আনন্দনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘাঁটিঘর এলাকায় নিজের বাবার বাড়িতে বিষাক্ত পদার্থ পান করেন রেহনা।পরে বাড়ির লোকজন তাকে দ্রুত কমলনগর সামাজিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়।কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়ায় হাঁপানিয়া হাসপাতালে রেফার করা হয়।এরপর ২০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জিবিপি হাসপাতালে পাঠানো হয়।কিন্তু সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।।ওই রাতেই প্রায় এগারোটার সময় রেহানা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।শনিবার দুপুর ২:৩০ মিনিটে রেহানার মৃতদেহ তার বাবার বাড়িতে পৌঁছালে শোকাহত পরিবারের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ। রেহানের পরিবার এবং আত্মীয়-স্বজনের একটাই দাবি এই নির্মম অত্যাচার এবং হত্যার সুষ্ঠু বিচার হোক।এই ঘটনাটি এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে এবং প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করেছে পরিবার। এখন শুধু দেখার বিষয় রেহানার জন্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয় কিনা।
Leave a Comment