স্মার্ট শহর আগরতলা, স্বাভাবিকভাবেই শহরের ব্যস্ততাও বেড়েছে। গাড়ি, বাইক, চার চক্রযান, রিক্সা, টমটমে এখন শহর ভীরে ঠাসা। তারউপর এখন পুজোর আবহ। আর মাত্র এক মাস তার পরই রাজ্যের সর্বোচ্চ উৎসব শারদোৎসব। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন ক্লাব গুলিতে পুজোর মন্ডপ তৈরি চলছে জোর কদমে। শারদোৎসবের আগে সিদ্ধি বিনায়ক গণেশ চতুর্থীতে সেজেছে রাজধানী শহর আগরতলা। প্রায় প্রতি বছর বাড়ছে পুজোর সংখ্যা। গনপতি বন্দনায় শহর এখন আলোকিত। এই আবহে শহরে কিছুটা যানজট হওয়া অস্বাভাবিকের কিছু নয়। কিন্তু তাই বলে যমনটা চিত্র উঠে আসছে তাও আবার স্বাভাবিক বলা যায় না। শহরের মোটর স্ট্যান্ড এলাকায় বহুতল মাল্টি পার্কিং শপিং কমপ্লেক্স নির্মান কাজ চলছে। এর ফলে এমনিতেই রাস্তার পরিধি অনেকটাই ছোট হয়ে পড়েছে, তার উপর একাংশ টমটম, রিক্সা সহ অস্থায়ী চাট ফুচকার দোকান গুলির যত্রযত্র পার্কিং সহ দোকান খোলার ফলে প্রতিদিন যানজট বাড়ছে। তারউপর মোটরস্ট্যান্ড পেট্রোল পাম্পের সামনে মুল রাস্তায় দাঁড়িয়ে গাড়ি বাইক চেকিংয়ের নামে আরও বেশী যানজট তৈরি করছেন খোদ ট্রাফিক বাবুরাই। পুজো আসছে তাই এখন অর্থ সংগ্রহ করতে হবে এই টার্গেট নিয়েই ট্রাফিক বাবুদের এতো ততপরতা। বাইকের কাগজ পত্র চেকিং, হেলমেট আছে কিনা, পেছনে বসা ব্যাক্তির হেলমেট নেই এই সব নিয়ে আইন কানুন দেখিয়ে জরিমানা আদায় করাটাই মুখ্য। এতে করে যে যানজট বাড়ছে, মানুষের সময় নষ্ট হচ্ছে এসবের দিকে কোনো নজর নেই ট্রাফিক বাবুদের। তারা নিজেরাই রাস্তার মাঝপথ দখল করে বসে থাকেন। এই গেলো পুরাতন মোটরস্ট্যান্ডের চিত্র। এরপর একটু এগিয়ে আসলে কাসারিপট্টি ও শান্তিপাড়া দুই বিপরীতমুখি রাস্তা প্রতিনিয়ত যানজট লেগেই থাকে। শান্তি পাড়ারা মসজিদ পট্টিতে বাইক নিয়ে আসা যাওয়ার মত অবস্থা নেই। রাস্তার উপর যত্রতত্র টমটম, অটো, ঠেলা দাড়কড়িয়ে দোকানের মাল উঠানামোনো হচ্ছে। মানুষ পায়ে হেটে মসজিদ পট্টির গলি পেড়োতে গেলে আধঘন্টা সময় লেগে যায়। এখানে ট্রাফিকবাবুদের কোনো নজর নেই। নেই পুর নিগমের টাস্ক ফোর্সের কোনো ভুমিকা। কামান চৌমুহনী থেকে মেলারমাঠ ২ কিলোমিটার পথে গাড়ি বাইকে যেতে সময় লাগে আধঘন্টা। মাঝখানে পশ্চিম থানার সামনে পুলিশ বাবুরা দাঁড়িয়ে শুধু ফাইন কাটতে ব্যাস্ত। এর আগে শকুন্তলা রোড, পুরো শকুন্তলা রোড ফুচকা, চাট, ঠান্ডা সরবত, চুরি মালা, গামছা নাইটি আর রিক্সা টমটম চালকদের দখলে। এই রোডে দু তিনটি মার্কেট, কিন্তু কোনো গ্রাহক মার্কেট গুলোতে ঢুকতে গেলে আগে ফুচকা চাট বিক্রেতাদের সাথে বাইক স্কুটি রাখা নিয়ে বচসায় লিপ্ত হতে হয়। ট্রাফিক বাবুরা এই এলাকায়ও মাঝে মধ্যেই অভিযান চালিয়ে বাইক স্কুটি উঠিয়ে নিয়ে যান। পড়ে বাইকের মালিকরা ট্রাফিক ভবনে গেলেই দক্ষিনা দিয়ে বাইক ছাড়িয়ে নিয়ে আসতে হয়। একই কায়দায় সর্বত্র ট্রাফিক বাবুদের কর্মযজ্ঞ। এই রকম ভাবেই শুক্রবারও শহরকে যানজট মুক্ত করার নামে অর্থ সংগ্রহের অভিযানে নামে ট্রাফিক দপ্তর। যে সমস্ত যানবাহনের সঠিক কাগজপত্র নেই তাদেরকে জরিমানা করা হয় এবং মামলা নেওয়া হয় । এদিন জিবি বাজার এলাকায় অভিযানে নেমে একথা বলেন ট্রাফিক পুলিশের এসপি সুদেষ্ণা ভট্টাচার্য্য। অভিযানে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত এসপি সুধাম্বিকা আর, দীপক কুমার সরকার এবং অন্যানরা। ট্রাফিক এসপি সুদেষ্ণা ভট্টাচার্য্য বলেন, শহরের আনাচে-কানাচে যত্রতত্র এলাকায় গাড়ি মোটর বাইক স্কুটি সহ নানান যানবাহন যেখানে খুশি সেখানেই পার্কিং করে চলছে জনগণ। মূলত শহরকে যানজট মুক্ত রাখতে আজকের এই অভিযান। বেশ কিছু দিন যাবৎ দেখা যাচ্ছে রাজধানীর বেশ কিছু জায়গায় রাস্তায় বেআইনিভাবে গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখা হচ্ছে। তাতে যানযট সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, তাছাড়া যে সমস্ত যানবাহন সঠিক কাগজপত্র নেই তাদেরকে জরিমানা করা হচ্ছে এবং মামলা নেওয়া হচ্ছে। বাস্তবে যানজট মুক্ত করতে ট্রাফিক বাবুদের কি পরিকল্পনা তা সকলেই প্রত্যক্ষ করছে। যতদিন পর্যন্ত জরিমানা আদায়কে প্রধান্য না দিয়ে সঠিক পরিকল্পনা মাফিক যানজট মুক্ত করার কাযে নিয়োজিত না হবেন ট্রাফিক বাবুরা ততিদিন পর্যন্ত শহরকে যানজটমুক্ত করা অসম্ভব। শহরকে স্বচ্ছ পরিচ্চজন্ন ও যানজট মুক্ত করতে হলে পুর নিগমকে সাথে নিয়ে জনসচেতনতা সর্বাগ্রে প্রয়োজন। এই কাজ না করে শুধু লোক দেখানো অভিযান আর জরিমানা আদায়ে এই সমস্যা সমাধানের নয় বলেই অভিমত সচেতন মহলের।