এসপি-র নামে তোলাবাজি! কোটি টাকার বাড়ির মালিক কনস্টেবল, ক্ষোভে ফেটে পড়লেন মতিনগরবাসী
নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা | ২৬ অক্টোবর
ত্রিপুরা পুলিশের একাংশের বিরুদ্ধে বারবার গুরুতর অভিযোগ উঠছে। কোথাও স্কুলছাত্রকে মার, কোথাও রাজনৈতিক চাপে নতিস্বীকার—এসবই যেন বর্তমানে প্রেসিডেন্টস কালার্স প্রাপ্ত খাকি উর্দিধারীদের করুন চিত্র। তবে এবার যা ঘটল, তা যেন সব লজ্জাকে ছাপিয়ে গেল। খোদ পশ্চিম জেলার পুলিশ সুপারের (SP) নাম ভাঙিয়ে ‘তোলাবাজি’, সম্পত্তি দখল ও হুমকির অভিযোগ উঠল এক পুলিশ কনস্টেবলের বিরুদ্ধে।
এই গুরুতর অভিযোগে ত্রিপুরার আমতলী থানার অন্তর্গত ফুলতলী মতিনগর এলাকার মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে রবিবার থানায় লিখিত মামলা দায়ের করেছেন।
অভিযুক্ত কনস্টেবল, অভিযোগ গুরুতর
অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবলের নাম আমির ভূঁইয়া, যিনি ফুলতলী মতিনগর এলাকার কদম আলী ভূঁইয়ার ছেলে। জানা গেছে, তিনি বর্তমানে ত্রিপুরা পুলিশের কনস্টেবল পদে পশ্চিম জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে কর্মরত।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, এই গুণধর পুলিশ কনস্টেবল গত কয়েক বছর ধরে এলাকার মানুষকে বিভিন্নভাবে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগের মধ্যে প্রধান হলো:
-
পশ্চিম জেলা পুলিশ সুপারের নাম করে জোরপূর্বক ‘তোল্লা’ (হাপ্তা/টাকা) আদায় করা।
-
এলাকার সহজ-সরল গরিব মানুষদের পুলিশের ভয় দেখিয়ে বৈধ সম্পত্তি জোরপূর্বক দখল করা।
-
মাত্র ১০ বছর আগে চাকরিতে যোগ দিয়ে মতি নগর ও বক্সনগরে প্রায় দেড় কোটি টাকার বিলাসবহুল বাড়ি তৈরি করা। এলাকাবাসীর সন্দেহ, এই বিপুল অর্থের উৎস কোনো অবৈধ কার্যকলাপ।
বৃদ্ধের জমি দখল ও হুমকির অভিযোগ
সম্প্রতি এই পুলিশ কনস্টেবল মতি নগর এলাকার এক বৃদ্ধ ব্যক্তির জমি জোর করে দখল করে নেন বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, বৃদ্ধের বাড়িতে তালা লাগিয়ে বাড়ির মালিককে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার হুমকিও দেন তিনি।
এই ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে রবিবার স্থানীয় এলাকাবাসীরা একটি গ্রাম সভার আয়োজন করেন। অভিযোগ, সেই গ্রাম সভায়ও আমির ভূঁইয়া মান্যগণ্য ব্যক্তিদের উপেক্ষা করে গায়ের জোর এবং প্রশাসনের দাপট দেখিয়ে ঝগড়া-বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। তিনি বয়স্ক ব্যক্তিদের ধাক্কাধাক্কি করেন এবং রাতের মধ্যেই সকলকে পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করিয়ে জেলে পাঠানোর হুমকি দেন।
আমতলী থানার দারস্ত এলাকাবাসী
এরপরই ভুক্তভোগী বৃদ্ধ ব্যক্তিসহ স্থানীয় জনতা একযোগে রবিবার দুপুরে আমতলী থানায় এসে অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবল আমির ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ এনে লিখিত মামলা দায়ের করেন। পাশাপাশি, স্থানীয়রা এই ঘটনাটি রাজ্য পুলিশের সদর দপ্তরকেও অবগত করেছেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ হাতে পেয়ে আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক (ওসি) পরিতোষ দাস দ্রুত অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবলের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
অবৈধ টাকার পাহাড়, ন্যায়বিচারের দাবি
সাংবাদিকদের ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে এলাকাবাসীরা পুলিশ কনস্টেবল আমির ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে কঠোরতম শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। তাদের সন্দেহ, কোনো বড় ধরনের অবৈধ কার্যকলাপের সাথে যুক্ত হয়েই সে এইভাবে টাকার পাহাড় গড়ে তুলছে।
এখন দেখার বিষয়, রাজ্য পুলিশ নিজেদের সম্মান রক্ষা করতে অভিযুক্ত কনস্টেবল আমির ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে কী ধরনের কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে। মুখ্যমন্ত্রী সহ পুলিশ প্রশাসনের কাছে এলাকাবাসীর দাবি—অবিলম্বে উপযুক্ত তদন্ত করে এই পুলিশকর্মীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।
