তেলিয়ামুড়া থানার মেলাপাথর এলাকায় শনিবার সন্ধ্যায় এক নারীর বস্তাবন্দি পচাগলা মৃতদেহ উদ্ধার হওয়ার ঘটনায় গোটা রাজ্যে নেমে এসেছে চাঞ্চল্যের ছায়া। পরিত্যক্ত এক ঘর থেকে উদ্ধার হওয়া এই দেহের চারপাশে আজ শুধু প্রশ্নের পাহাড়— কে এমন নৃশংস কাজ করল? কেনই বা এমন পরিণতি হলো এক নিরীহ গৃহবধূর?
📍 ঘটনার বিবরণ
শনিবার বিকেল নাগাদ স্থানীয়রা পরিত্যক্ত একটি ঘর থেকে তীব্র দুর্গন্ধ টের পান। সন্দেহ জাগতেই খবর দেওয়া হয় তেলিয়ামুড়া থানায়। মুহূর্তেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় বিশাল পুলিশবাহিনী। ফরেনসিক দলের উপস্থিতিতে বস্তাটি খোলা হলে, সবার সামনে আসে এক নারীর বিকৃত, পচাগলা দেহ।
পরবর্তীতে মৃতার বাবা রতন চন্দ্র মোদক দেহটি শনাক্ত করেন। জানা যায়, মৃতার নাম শর্মিষ্ঠা মোদক (বয়স ৩৬)। শর্মিষ্ঠার প্রথম বিয়ে হয়েছিল কাঞ্চনপুরের গৌতম বণিকের সঙ্গে, পরবর্তীতে ডিভোর্সের পর সে গোপাল মোদক নামে এক যুবকের সঙ্গে পুনরায় বিবাহ করে এবং এই বাড়িতেই বসবাস শুরু করে। কিন্তু সেই ঘরই আজ মৃত্যুর ঠিকানা হয়ে দাঁড়াল তার জন্য।
🕵️♀️ তদন্ত ও সন্দেহের দিক
পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, এটি একটি হত্যাকাণ্ড। এমনকি ধর্ষণের পর খুনের আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছে না তারা। ফরেনসিক টিম ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থল থেকে রক্তের দাগ, কাপড়ের টুকরো, আঙুলের ছাপসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ সংগ্রহ করেছে।
একজন সিনিয়র পুলিশ অফিসার জানান, “ঘটনাটি অত্যন্ত রহস্যজনক। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে এলে প্রকৃত কারণ ও সময় সম্পর্কে আরও স্পষ্ট ধারণা মিলবে। ইতিমধ্যে মৃতার স্বামীসহ একাধিক ব্যক্তির জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।”
😔 সমাজে নারীর নিরাপত্তা—প্রশ্নের মুখে
এমন ঘটনা শুধু তেলিয়ামুড়া নয়, গোটা সমাজের বিবেককে নাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও নারী নির্যাতন, ধর্ষণ কিংবা হত্যার খবর উঠে আসছে। প্রশ্ন একটাই — নারীরা কি আজও নিরাপদ?
এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সমাজ যতই আধুনিক হোক, নারী সুরক্ষার ক্ষেত্রে আমরা এখনো পিছিয়ে আছি। নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা রোধে কেবল প্রশাসন নয়, সমাজের প্রতিটি স্তরে সচেতনতা ও প্রতিরোধ গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি।
⚖️ ন্যায়বিচারের দাবি
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, “দোষীরা যতই প্রভাবশালী হোক না কেন, তাদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে।” এই দাবি শুধু এক এলাকার নয় — প্রতিটি নারী, প্রতিটি পরিবারের নিরাপত্তার প্রশ্নে এটা আজ এক জাতীয় দাবি হওয়া উচিত।
বর্তমানে মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দল যৌথভাবে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, খুব শীঘ্রই এই রহস্যের জট খুলবে।
🕯️ শেষকথা
শর্মিষ্ঠা মোদকের মতো আর কোনো নারী যেন এমন পরিণতির শিকার না হন — এই হোক সমাজের অঙ্গীকার। নারী সুরক্ষার আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ, জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং পারিবারিক সহিংসতার বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিবাদই পারে এই অন্ধকার সমাজকে আলোর পথে নিয়ে যেতে।