১ নং হরিনা হাই স্কুলে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রের উপর শিক্ষিকার বেধড়ক মারধর — আতঙ্কে ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকরা, বদলির দাবিতে সরব জনমত
শিক্ষা মানেই আলোকিত সমাজ গঠন। কিন্তু শিক্ষক-শিক্ষিকার আচরণে যখন শিক্ষার পরিবেশ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে, তখন তা শুধু বিদ্যালয় নয়, গোটা সমাজের জন্য এক ভয়ঙ্কর সংকেত। এমনই এক ঘটনা ঘটল সাব্রুমের থাইবুং এলাকার নং ১ হরিনা হাই স্কুলে। আজ মঙ্গলবার ওই বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র রোহন ত্রিপুরাকে বিনা কারণে বেধড়ক মারধর করেন শিক্ষিকা সংঘমিত্রা দাস বৈষ্ণব।
অভিযোগ, হঠাৎ করেই শিক্ষিকা রোহনের উপর চড়াও হন এবং তাকে নির্মমভাবে প্রহার করেন। ঘটনায় আতঙ্কিত সহপাঠীরা চিৎকার শুরু করলে বিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় রোহনকে বাড়ির অভিভাবকরা দ্রুত সাব্রুম হাসপাতালে নিয়ে যান। বর্তমানে সে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
এই প্রথম নয়, সংঘমিত্রা দাস বৈষ্ণবের বিরুদ্ধে এর আগেও নানা অভিযোগ উঠেছে। শুধু ছাত্র-ছাত্রী নয়, সহকর্মী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রতিও তার আচরণ অস্বাভাবিক ও আক্রমণাত্মক বলে জানা গেছে। বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক অভিযোগ করেছেন, কিছুদিন আগে তিনি স্কুলের টিচার ইনচার্জ ত্রিদীপ শীলকে অফিসকক্ষে লাকড়ি নিয়ে আঘাত করার চেষ্টা করেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন স্কুল পরিচালন কমিটির সদস্যরাও। সেই ঘটনার পর টিচার ইনচার্জ লিখিতভাবে শিক্ষা দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছিলেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
বর্তমানে তার কারণে শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্র-ছাত্রী, এমনকি অভিভাবকরা পর্যন্ত অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। বিদ্যালয়ের পরিচালন কমিটি জানিয়েছে, এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে শিক্ষার পরিবেশ একেবারেই ভেঙে পড়বে।
অভিভাবকরা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, তারা এই ঘটনার প্রতিবাদে সাব্রুম থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করবেন। পাশাপাশি তারা দাবি করেছেন, অবিলম্বে ওই শিক্ষিকাকে অন্যত্র বদলি করতে হবে। নইলে তারা বৃহত্তর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবেন।
এক অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “যেখানে সরকার ও শিক্ষা দপ্তর ড্রপ আউট ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়ি থেকে কাউন্সেলিং করে বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে, সেখানে একজন শিক্ষিকার এমন অমানবিক আচরণ পুরো উদ্যোগকেই প্রশ্নবিদ্ধ করছে। আমাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে ভয় হচ্ছে।”
তথ্যবিজ্ঞ মহল মনে করছে, এই ঘটনা কেবল শারীরিক নির্যাতনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এ ধরনের আচরণ একজন শিক্ষার্থীর মানসিক অবস্থার উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষক-শিক্ষিকার কাছ থেকে অবহেলা, মারধর বা অমানবিক আচরণের শিকার হয়, তবে তারা ধীরে ধীরে বিদ্যালয় বিমুখ হয়ে পড়তে পারে। অনেক সময় শিক্ষার্থীরা মারাত্মক মানসিক অবসাদগ্রস্ত হয়ে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত পর্যন্ত নিতে বাধ্য হয়।
তারা সতর্ক করে বলেন, “এই ঘটনাকে হালকাভাবে নিলে ভবিষ্যতে মারাত্মক সামাজিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। শিক্ষকের কাছে শিক্ষার্থীরা আশ্রয় খোঁজে, ভয় নয়। আর যদি শিক্ষকই ভয়ের প্রতীক হয়ে ওঠেন, তবে শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি আস্থা ধসে পড়বে।”
স্থানীয় জনগণ প্রশ্ন তুলেছেন, পূর্বে সংঘমিত্রা দাস বৈষ্ণবের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কেন শিক্ষা দপ্তর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। পরিচালন কমিটির সদস্যদের দাবি, লিখিত প্রতিবেদন পাঠানোর পরও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নীরবতা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
এখন দেখার বিষয়, প্রশাসন ও শিক্ষা দপ্তর কত দ্রুত ব্যবস্থা নেয়। যদি অবিলম্বে শিক্ষিকাকে অন্যত্র বদলি না করা হয়, তবে আন্দোলনের পথে নামবে অভিভাবক ও সাধারণ মানুষ—এমন হুঁশিয়ারিও পাওয়া গেছে।
আজকের এই হৃদয়বিদারক ঘটনা নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে, শিক্ষাক্ষেত্রে সঠিক নিয়ন্ত্রণ ও পর্যবেক্ষণের অভাব কতটা ভয়াবহ হতে পারে। যেখানে শিক্ষা দপ্তর ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ গঠনে নিরলস চেষ্টা চালাচ্ছে, সেখানে একজন শিক্ষিকার অমানবিক আচরণ গোটা উদ্যোগকেই ধাক্কা দিচ্ছে।
সামাজিক মহল মনে করছে, এখনই কঠোর ব্যবস্থা না নিলে ১ নং হরিনা হাই স্কুলের ঘটনাটি নিছক একটি পৃথক ঘটনা থেকে শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য এক অশনি সংকেত হয়ে উঠবে। তাই অভিভাবক, শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থে অবিলম্বে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি।