ককবরক ভাষা আন্দোলন:…….. ন্যায্য দাবি নাকি রাজনৈতিক স্বার্থের খেলা? রাজ্যবাসীকে হেনস্থার পর নাটকীয় বন্ধের প্রত্যাহার ! তাহলে কি সমস্যার সমাধান পেল প্রদ্যুৎ???
ত্রিপুরার রাজনীতির মঞ্চে আবারও উত্তেজনা ছড়িয়েছে ককবরক ভাষার জন্য রোমান হরফ চালুর দাবিকে কেন্দ্র করে। তিপরা মথার ছাত্র সংগঠন (TSF) আন্দোলনের ডাক দিয়ে পুরো রাজ্যকে কার্যত স্তব্ধ করে দিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে—এই আন্দোলন কি সত্যিই ভাষার ন্যায্য দাবির জন্য, নাকি এর আড়ালে লুকিয়ে আছে রাজনৈতিক স্বার্থ? TSF-এর দাবি, ককবরক ভাষার জন্য রোমান হরফের স্বীকৃতি জরুরি। কিন্তু আন্দোলনের ধরন দেখে অনেকেই মনে করছেন, এটি ভাষার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যম হয়ে উঠেছে। আন্দোলনকারীরা গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সড়ক, রেলপথ এবং রাজধানীর বিভিন্ন অংশ অবরুদ্ধ করে রাখায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। যদিও TSF দাবি করছে, তারা গণতান্ত্রিক উপায়ে নিজেদের দাবি জানাচ্ছে, তবে আন্দোলনের কৌশল নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ নাগরিকরা। একজন ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ভাষার জন্য আন্দোলন করতেই পারেন, কিন্তু আমাদের ব্যবসা বন্ধ করে, হাসপাতালের রাস্তা বন্ধ করে দাবি আদায় করতে হবে কেন?সাধারণ মানুষের অভিযোগ, আন্দোলন করতে হলে তা এমনভাবে করা উচিত যাতে জনজীবন স্বাভাবিক থাকে। কিন্তু এই আন্দোলনের ফল জরুরি পরিষেবা, বিশেষত অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্স পর্যন্ত যেতে দেওয়া হয়নি।সাব্রুম-আগরতলা রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকায় বহু মানুষ আটকে পড়েছেন। অফিসযাত্রী, পরীক্ষার্থীরা দীর্ঘক্ষণ রাস্তায় আটকে ছিলেন। এই পরিস্থিতিতে সরকার ও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কেন এত বড় একটি আন্দোলনকে আগে থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা হয়নি? কেন জনগণের স্বার্থকে প্রাধান্য না দিয়ে আন্দোলনকারীদের এত ছাড় দেওয়া হলো? অনেকের মতে, সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে আন্দোলনকে প্রশ্রয় দিচ্ছে, যাতে জনজাতি সংগঠনগুলোর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা যায়। শুক্রবার এবং শনিবারের রোড অবরোধের পর TSF আকস্মিকভাবে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়। অথচ তাদের মূল দাবি এখনো পূরণ হয়নি। ফলে প্রশ্ন উঠছে—আন্দোলনের পেছনে কি সত্যিই ভাষার স্বার্থ, নাকি এটি ছিল কেবলমাত্র রাজনৈতিক চাপ তৈরির একটা কৌশল? এক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, এটা শুধু ভাষার লড়াই নয়, এখানে রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতা প্রদর্শনের একটা বড় বিষয় আছে। TSF দেখাতে চায়, তাদের ক্ষমতা কতটা, কিন্তু শেষমেশ তারা নিজেরাই পিছিয়ে এল। এটা কি সরকার বা অন্য কোনো পক্ষের সঙ্গে গোপন সমঝোতার ফল?” সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলছে—এই আন্দোলনের প্রকৃত উদ্দেশ্য কী? – যদি এটি কেবলমাত্র ভাষার অধিকার নিয়ে হতো, তাহলে জনজীবন বিপর্যস্ত না করেও আন্দোলন করা যেত। যদি এটি একটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন হতো, তাহলে জনগণের সমর্থন পাওয়া যেত, বরং এখন অনেকেই এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে। ভাষা নিয়ে লড়াই অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু সাধারণ মানুষের দুর্ভোগকে পুঁজি করে যদি রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করা হয়, তাহলে তা আদৌ ভাষার জন্য লড়াই থাকে কি? নাকি এটি ক্ষমতার খেলা হয়ে দাঁড়ায়? এই আন্দোলন কি সত্যিই ককবরক ভাষার জন্য রোমান হরফ স্বীকৃতি আদায় করবে, নাকি কিছুদিন পর রাজনৈতিক চুক্তির আড়ালে হারিয়ে যাবে আন্দোলনকারীরা কি জনগণের সমর্থন ধরে রাখতে পারবে, নাকি তাদের কৌশলই তাদের বিরুদ্ধে যাবে? এটাই এখন দেখার বিষয়!