ঝুলন্ত মৃতদেহের ঘটনা: কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের যাত্রীদের নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ

3 Min Read

কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে ঝুলন্ত মৃতদেহ প্রশ্নচিহ্নের মুখে যাত্রীদের নিরাপত্তা

কলকাতা টু শিয়ালদা কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে ঝুলন্ত মৃতদেহ, প্রশ্নচিহ্নের মুখে যাত্রীদের নিরাপত্তা

গতকাল সোমবার ১৪ই অক্টোবর রাত আনুমানিক দশটা নাগাদ সাব্রুম থানার পুলিশের কাছে খবর আসে কলকাতার শিয়ালদা থেকে সাব্রুমে যে ট্রেন আসে যার নাম্বার যথাক্রমে ১৩১৭৪ সেই ট্রেনে রেলের সাফাই কর্মীরা একটি ঝুলন্ত মৃতদেহ দেখতে পায়। ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় সাব্রুম থানার পুলিশ।রেল দপ্তরের পক্ষ থেকে খবর দেওয়া হয় জিআরপির আধিকারিকদের। পরবর্তী সময় জিআরপির আধিকারিকরা সাব্রুম এলে এসে পৌছলে- জিআরপি পুলিশ এবং সাব্রুম থানার পুলিশের উপস্থিত মৃতদেহ নামিয়ে আইনি কর্মকান্ড শেষ করে সাব্রুম হাসপাতালের মর্গে নিয়ে আসা হয় সকাল আনুমানিক পাঁচটা পনেরো মিনিট নাগাদ। প্রাথমিক নিরিকসনের পর মৃতদেহের মধ্য থেকে পাওয়া যায় একটি মোবাইল, সামান্য কিছু টাকা, আই কার্ড, আধার কার্ড এবং প্যান কার্ড।

খবর নিয়ে জানা যায় মৃত ব্যক্তির নাম অরুণ দেবনাথ, পিতা দুলাল দেবনাথ, বয়স ৪৮, বাড়ি ধর্মনগরের উপ্তাখালি এলাকার চারুবাসা পেট্রোল পাম্পের পাশে । মৃত ব্যক্তির পকেটে ছিল শিয়ালদা থেকে ধর্মনগর আসার একটি টিকিট। জানা যায় কর্মসূত্রে ব্যাঙ্গালোর থাকত মৃত অরুণ দেবনাথ। পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায় ছয় মাস পর নিজের সাথে এ ছ মাসের অর্জিত টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরছিল অরুণ দেবনাথ।পুনরায় যাওয়ার সময় সাথে নিয়ে যাবে তার স্ত্রীকে তার নিজ কর্মক্ষেত্রে। সোমবার বিকাল আনুমানিক পাঁচটা নাগাদ স্ত্রীর সাথে শেষবারের মত কথা হয় মৃত অরুণ দেবনাথের।তারপর থেকেই সুইচ অফ আসে অরুনের মোবাইল। সাব্রুম থানার পুলিশের পক্ষ থেকে অরুণের বাড়িতে ফোন করে বিষয় সম্বন্ধে পরিবারের লোকজনদের জানান দিলে কান্নায় ভেঙে পড়ে গোটা পরিবারের লোকজন। মঙ্গলবার আনুমানিক ৪:৩০ মিনিট নাগাদ ময়না তদন্ত শেষে অরুনের পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয় তার মৃতদেহ।
কিন্তু রেলের কামরায় এই মৃতদেহের অসংলগ্ন অবস্থায় ঝুলে থাকাকে কেন্দ্র করে নানা প্রশ্ন দানা বাধে শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মহলে। জানা যায় ঝুলন্ত অবস্থায় অরুণের নাক এবং মুখ দিয়ে বেরিয়েছিল তাজা রক্ত। তার এক হাত ছিল লাগেজ কম্পার্টমেন্টের উপর এবং পা পুরোপুরি ভাবে ট্রেনের ফ্লোর কে স্পর্শ করা। গলা ছিল ট্রেনের বগীর পাখায় ঝোলানো।যা দেখে অসংলগ্নতা আঁচ করেন শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন মহল। এছাড়াও তার পকেটে পাওয়া টিকিট ছিল শিয়ালদা থেকে ধর্মনগর পর্যন্ত, তাহলে কি করে অরুণ এসে পৌঁছায় সাব্রুম? কোথায় ছিল টিটি? কোথায় ছিল আরপিএফ কিংবা জিআরপি? অরুণ যদি বিকেল পাঁচটায় আত্মহত্যা করে তাহলে কেন তার ঝুলন্ত দেহ চোখে পড়ল না দীর্ঘ সময় যাবৎ? যখন গোটা ট্রেনে মানুষ উপস্থিত ছিল শতাধিক। কোথায় গেল তার ছ মাসের অর্জিত অর্থ? অরুণের মৃত্যু কি আত্মহত্যা না পরিকল্পিত খুন? সবকিছু নিয়ে এক রহস্য বেষ্টিত অরুণের মৃত্যু। তৎসঙ্গে সাব্রুম রেলস্টেশনের অব্যবস্থা কেও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় এই অস্বাভাবিক মৃত্যু। বর্তমানে স্টেশন চত্তর খালি হতে না হতেই অসামাজিক কর্মকান্ডের মৃগয়া ক্ষেত্র পর্যবেষিত সাব্রুম রেল স্টেশন। নেশা জাতীয় দ্রব্যের আদান-প্রদান, চুরি সহ নানাবিধ অসামাজিক কর্মকান্ড নিত্য ঘটে চলছে স্টেশন চত্বরে এমনটাই অভিযোগ। ঠুটো জগন্নাথের ভূমিকায় স্টেশন মাস্টার। সবকিছু মিলিয়ে যাত্রীদের নিরাপত্তা কতটা সুনিশ্চিত তাই এখন প্রশ্নচিহ্নের মুখে।

Share This Article
Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version