নববর্ষে নিভে গেল জীবন প্রদীপ: বেপরোয়া বোলেরো গাড়ির ধাক্কায় রাজেশ রায়ের করুণ মৃত্যু
নববর্ষের সকাল যখন নতুন স্বপ্ন আর আশার আলো নিয়ে হাজির হয়, ঠিক তখনই দক্ষিণ চড়িলাম গ্রামের একটি পরিবারে নেমে আসে চরম অন্ধকার। মাত্র ২৯ বছর বয়সী রাজেশ রায়, আদর করে যাঁকে বিষ্ণু বলেই ডাকা হতো, হারিয়ে গেলেন এক বেপরোয়া গাড়ির ধাক্কায়।
মঙ্গলবার ভোর রাতে বিশালগড় থানাধীন লালসিং মুড়া স্ট্যান্ড সংলগ্ন আদিঘোষ মিষ্টান্ন ভান্ডারের সামনে ঘটে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে বেপরোয়া গতিতে আসা একটি বোলেরো গাড়ি রাজেশকে সজোরে ধাক্কা মেরে পালিয়ে যায়।
অগ্নিনির্বাপক দপ্তরের কর্মীরা সঙ্গে সঙ্গে রক্তাক্ত রাজেশকে উদ্ধার করে নিয়ে যান বিশালগড় মহকুমা হাসপাতালে। সেখান থেকে তাঁকে জিবিপি হাসপাতালে রেফার করা হয়। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। রাজেশ রায় চিরদিনের মতো বিদায় নেন এই পৃথিবী থেকে।
সিসিটিভি থাকার পরও রহস্যে ঢাকা ঘাতক গাড়ির পরিচয়
ঘটনাস্থলে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকা সত্ত্বেও প্রশাসন এখনও ঘাতক গাড়িকে শনাক্ত করতে পারেনি। কারণ, দুঃখজনকভাবে সিসিটিভি ছিল অচল। এই প্রশ্ন এখন উঠছে – এত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় কেন সিসিটিভির রক্ষণাবেক্ষণ ঠিকভাবে হয়নি?
এক সন্তানের ভেঙে পড়া স্বপ্ন
রাজেশের ৮ বছরের একমাত্র সন্তান আজ বাবাকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাতে পারলো না। ছেলেটির চোখে শুধুই প্রশ্ন – “বাবা কোথায়?” এক মুহূর্তেই সবকিছু বদলে গেল তার জন্য। রাজেশ ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।
একজন পরিশ্রমী মানুষ, একজন ভালো বাবা, একজন ভালো বন্ধু
দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে রাজেশ লালসিং মুড়া স্ট্যান্ড সংলগ্ন আদিঘোষ মিষ্টান্ন ভান্ডারে কাজ করতেন। দোকানের মালিক ও সহকর্মীদের প্রিয় ছিলেন তিনি। তার মৃত্যুতে গোটা বিশালগড় ব্যবসায়ী মহল শোকস্তব্ধ। হাজারো চোখের জলে বিদায় জানানো হয় রাজেশকে, যখন তার মৃতদেহ ফিরিয়ে আনা হয় নিজ গ্রামে।
আমাদের কিছু প্রশ্ন, প্রশাসনের কাছে কিছু দাবি
- কেন অচল ছিল সিসিটিভি ক্যামেরা?
- কীভাবে পালিয়ে গেল ঘাতক গাড়ি?
- প্রশাসন কবে নাগরিক নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবে?
রাজেশ রায় আর ফিরে আসবেন না। কিন্তু তার মতো আরও অনেক রাজেশ যেন এইভাবে অকালে না হারিয়ে যান – সেই দায়িত্ব আমাদের সকলের।
লেখাটি আপনার মন ছুঁয়েছে? শেয়ার করুন। প্রশ্ন তুলুন। ন্যায়বিচারের দাবিতে পাশে থাকুন।