বক্সনগরে হিন্দু যুবতীকে নিয়ে পালানোর অভিযোগ মুসলিম যুবকের

4 Min Read

কলেজের নাম করে হিন্দু যুবতীকে নিয়ে মুসলিম যুবকের পলায়ন, অবিলম্বে উদ্ধারের দাবিতে থানায় ডেপুটেশন

ভালোবাসা নাকি অন্ধ,ভালোবাসা কখনো কোনো সীমা মানে না। স্থান, কাল, পাত্র, ধর্ম—কোনো কিছুই তা আটকাতে পারে না। ভালোবাসা মানতে চায় না তথাকথিত কোন বিধি নিষেধ। এই ভালোবাসার অন্ধত্বই কখনো কখনো সামাজিক অস্থিরতার সৃষ্টি করে। সম্প্রতি এমনই এক ঘটনা ঘটেছে, যেখানে সামাজিক মাধ্যমের প্রভাবে এক হিন্দু কলেজ পড়ুয়া ছাত্রী নিজের প্রেমিকের হাত ধরে পালিয়ে যায়। এই ঘটনায় মানিক্যনগর এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে এবং তাঁরা অবিলম্বে তাদের মেয়েকে উদ্ধার করার দাবিতে থানায় ডেপুটেশন দিয়েছেন।
জানা যায় গত ২২শে অক্টোবর, মানিক্য নগর গ্রামের ৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা স্বপন দাসের কন্যা জিম্পি দাস কলেজে যাওয়ার নাম করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। কিন্তু বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হলেও সে আর বাড়ি ফিরে আসেনি। বাড়ির লোকজন উদ্বিগ্ন হয়ে বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করতে শুরু করেন। পরে জানতে পারেন যে, জিম্পি নয়নজলা গ্রামের আবু কালামের ছেলে ফারুক হোসেনের সাথে পালিয়ে গিয়েছে।
ঘটনার পরপরই, দুই পরিবারের সদস্যরা কলমচৌড়া থানায় বিষয়টি জানান এবং স্থানীয় পুলিশ তৎক্ষণাৎ তদন্ত শুরু করে। কলমচৌড়া থানার ওসি নারুগোপাল দেব এবং এলাকার বিধায়ক তফাজ্জল হোসেন দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তাঁরা দুই ধর্মের মধ্যে শান্তি বজায় রাখতে সচেষ্ট থাকেন এবং ঘটনাটি যেন সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি না করে, সেদিকে বিশেষ নজর রাখেন। সারারাত তাঁরা নিজে থেকে বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে তল্লাশি চালান এবং সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
প্রাথমিক তদন্তের সময় পুলিশ ফারুক হোসেনের পিতা সহ মোট সাত জনকে থানায় এনে ৪৮ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করে,কিন্তু কোনো তথ্য না পেয়ে তাঁদের ছেড়ে দেয়। তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ আগরতলা এয়ারপোর্টের সিসি টিভি ফুটেজ পরীক্ষা করে দেখতে পায় যে, ২২শে অক্টোবর দুপুর ১২:৫০ মিনিটে জিম্পি এবং ফারুক ইন্ডিগো 6E 6097 নম্বরের ফ্লাইটে আগরতলা থেকে চেন্নাইয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
পলায়নের এক দিন পর, জিম্পি একটি ভিডিও বার্তা তার মায়ের কাছে এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করে জানায় যে, সে নিজ ইচ্ছায় বাড়ি ছেড়ে ফারুকের সাথে পালিয়ে এসেছে।সে তার ধর্ম পরিবর্তন করে এক মাস আগেই ‘জিম্মি বেগম’ নামে একটি এফিডেভিট করে কোর্ট ম্যারেজ করেছে। সে তার পরিবার এবং প্রশাসনকে অনুরোধ জানায় তাকে যেন আর খুঁজে না হয় এবং অযথা হয়রানি না করা হয়।

এই ঘটনার পর, মানিক্যনগর এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বী গ্রামবাসীরা ২৪ অক্টোবর সকাল ১১ ঘটিকার সময় কলমচৌড়া থানার সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। তাঁরা দাবি করেন যে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের মেয়েকে উদ্ধার করতে হবে, অন্যথায় তাঁরা বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন। ডেপুটেশনের সময় তাঁরা জানান যে, তাঁদের মেয়ে কলেজে যাওয়ার সময় ফারুক তাকে জোর করে গাড়িতে তুলে নিয়ে গিয়েছে। তাঁরা প্রশাসনকে অনুরোধ করেন দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য।
থানার ওসি নারুগোপাল দেব ডেপুটেশন গ্রহণ করে এলাকাবাসীকে আশ্বাস দেন যে, পুলিশ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে দ্রুত তদন্ত করছে এবং তাঁদের মেয়েকে উদ্ধার করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করবে। তিনি আরও জানান যে, তাঁরা এই ঘটনায় কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি হতে দেবেন না এবং দুই ধর্মের মানুষের মধ্যে শান্তি বজায় রাখতে সচেষ্ট থাকবেন।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে মানিক্যনগর এলাকার জনগণের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। তারা মেয়েটির নিরাপত্তা এবং দ্রুত উদ্ধার কামনা করছে। অন্যদিকে, প্রশাসনও ঘটনাটিকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে তদন্ত করছে। এখন দেখার বিষয়, পুলিশ তাঁদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মেয়েটিকে দ্রুত উদ্ধার করতে সক্ষম হয় কি না। এই ঘটনা একটি সামাজিক সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে, যেখানে ভালোবাসা এবং ধর্মের দ্বন্দ্ব বারবার আমাদের সমাজে প্রতিফলিত হয়। প্রশাসনের দায়িত্ব হলো সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে সমাজে শান্তি এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা।

Share This Article
Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version