রাজ্যে রেল পরিষেবায় যাত্রী সাচ্ছন্দ্য নিয়ে বরাবরই অভিযোগ উঠে থাকে। ত্রিপুরা এখন দেশের মানচিত্রে মাথা তুলে ধারাচ্ছে। ফলে রাজ্য থেকে একাধিক দূর পাল্লার ট্রেন দেশের বিভিন্ন প্রদেশে/ শহরে পাড়ি দিচ্ছে। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি প্যাসেঞ্জার রেল রাজ্যের এক প্রান্তের সাথে আরেক প্রান্তকে জুরছে। ভাড়া, সময় ও তুলনামুলক আরামদায়ক জার্নির ফলে এখন বেশীর ভাগ মানুষের পছন্দ রেল পরিষেবা। বিশেষ করে লোকাল / ডেমু ট্রেন গুলিতে রাজ্যের মানুষ প্রতিদিনকার সফর সাড়ছেন। শহর আগরতলা থেকে দক্ষিনে সাব্রুম উত্তরে ধর্মনগর চুড়াইবাড়ি সহ আসামের করিমগঞ্জ শিলচর পর্যন্ত এই সমস্ত লোকাল / ডেমু ট্রেন গুলি যাত্রী পরিষেবা দিচ্ছে। বেশ ভালোই সুবিধা নিচ্ছেন মানুষ এই পরিষেবার। কিন্তু এই পরিষেবার ক্ষেত্রেও একাধিক বার যাত্রী সাধারনের সুরক্ষা সহ পরিষেবার আরও মানন্নোয়ন নিয়ে অভিযোগ, পরামর্শ উঠে আসে সাধারণ মানুষের তরফে। কিন্তু রেলে কর্তব্যরত সরকারি আধিকারিকরাই যদি সুরক্ষিত না থাকেন তাহলে যাত্রী সাধারনের সুরক্ষা দেবেন কে। সম্প্রতি কিছুদিন আগেই দেওঘর আগরতলা এক্সপ্রেসে রাতে এক মহিলা যাত্রীর সাথে দুর্ব্যবহার ও শারীরিক ভাবে নিগৃহের অভিযোগ উঠেছিল ঐ ট্রেনে কর্তব্যরত টিটিই-র বিরুদ্ধে। স্যন্দন পত্রিকা দায়বব্ধতা নিয়ে সেই সংবাদ প্রচার করে। ঘটনার তদন্ত করে ভারতীয় রেল। শাস্তির মুখে পড়তে হয় অভিযুক্ত টিটিইকে। সাময়িক বরখাস্ত করা তাকে। এবার উল্টো তার বিপরীত ঘটনা। এক্ষেত্রেও সততা ও দায়বদ্ধতা নিয়েই এই সংবাদ প্রচার করছি আমরা। প্রসঙ্গত শুক্রবার ধর্মনগর আগরতলা যাত্রীবাহী প্যাসেঞ্জার ট্রেনে কলা ব্যবসায়ীদের হাতে শারীরিক ভাবে আক্রান্ত হন কর্তব্যরত টিটিই। বেআইনীভাবে কামরায় কলা বোঝাইকে কেন্দ্র করে মনু স্টেশনে কর্তব্যরত টিটি আক্রমণের শিকার হয়েছেন । যার ভিডিও ইতিমধ্যেই সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ঘটনার বিবরণে জানা যায়, প্রতিদিনের মতো আজও পাহাড়ি অঞ্চলের জানজাতি কলা ব্যবসায়ীরা রেলে করে কলা ভর্তি করে নিয়ে আসে। তার ফলে যাত্রীদের বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তাছারা, যাত্রীরা রেলে ওঠানামা করতেও অসুবিধায় পড়তে হয়। সাধারণ কামরায় ব্যবসায়ীরা কলা রাখলে কয়েকজন যাত্রী এবিষয়ে কর্তব্যরত টিটিকে অভিযোগ করেন। সাথে সাথে কর্তব্যরত টিটিই ব্যবসায়ীদের বলে সাধারণ কামরায় কলা বোঝাই করা নিষিদ্ধ। সাথে সাথে ব্যবসায়ী সহ জনজাতী মহিলারা টিটিইর উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। মনু রেলস্টেশনে রেল থামতেই মহিলারা টিটিইকে রেল থেকে নামিয়ে বেধড়ক মারধর করেন। সাথে সাথে পুলিশকে খবর পাঠানো হয়। সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে আক্রান্ত টিটিই জানিয়েছেন, যাত্রীরা তাঁর কাছে অভিযোগ করেন কলা রাখার কারণে তাঁদের বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এবিষয়ে ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলতে গেলে তাদের দ্বারা আক্রমণের শিকার হন তিনি। এক পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, ট্রেনে কলা বোঝাইকে কেন্দ্র করে টিটির সাথে ঝামেলা শুরু হয়েছিল। আচমকাই তারা টিটিইকে মারতে থাকে। এবার কথা হচ্ছে রেলে তো রেল পুলিশ থাকার কথা তবে কোথায় ছিলো আর পি এফ ? মার খেয়ে টিটিই বাবু মনু রেলস্টেশন ইনচার্জের রুমে গিয়ে আত্মরক্ষা করেন। দ্বিতীয়বার ওটার সাহস করেনি। অথচ অভিযুক্ত কলা ব্যবসায়ীরা কিন্তু সেই ট্রেনেই বহালতবিয়তে পাড়ি দিলেন আগরতলায়। জিআরপিএফরা ছিল শুধু দর্শকের ভূমিকায়। প্রতিদিনই পেচারথল ও মনু স্টেশন থেকে জেনারেল কামড়ায় কলার ছড়ি বোঝাই করে অবৈধভাবে জনজাতি ব্যবসায়ীরা আগরতলা আসে । ট্রেনের যাতায়াতের দরজা পর্যন্ত কলা বোঝাই করে বন্ধ করে দেয় তারা। অথচ তাদের ক্ষিপ্ততার সামনে কারো প্রতিবাদ করার সাহস নেই । এতে প্রতিদিনই নিত্যযাত্রীদের অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। শুক্রবারও একইভাবে ধর্মানগর থেকে আগরতলা গামী ০৫৬৭৬ নম্বরের ট্রেন মনু রেলস্টেশনে পৌছালে কতিপয় কলা ব্যবসায়ীরা ট্রেনের জেনারেল কামরার দরজায় কলা বোঝাই শুরু করে। জনা কয়েক ট্রেনে উঠতে না পেরে বিষয়টি নিয়ে কর্তব্যরত টিটিকে অভিযোগ করেন। টিটিই অতুল কৌশিক অবৈধভাবে চড়াও হওয়া কলা ব্যবসায়ীদের কে অবগত করেন যে এভাবে কলা বোঝাই করে জেনারেল কামরার দরজা আটকে মালামাল নিয়ে যাওয়া নিষিদ্ধ। অন্যথায় তাদেরকে জরিমানা করা হবে। সাথে সাথেই অবৈধভাবে চড়াও হওয়া কলা ব্যবসায়ীরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে এবং টিটিই অতুল কৌশিক কে বেধড়ক মারধর করে। তাতে গুরুতর ভাবে আহত হন অতুল কৌশিক। পাশাপাশি উনার একমাত্র মোবাইল ফোন ও ফাইনের খাতাও ছিনিয়ে নেয় তারা। মনু স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে একজন টিটিইকে বেধড়ক মারধর চলতে থাকলেও জিআরপিএফ ছিল ধৃতরাষ্টের ভূমিকায়। কোন মতে জীবন রক্ষা করে স্টেশন ম্যানেজারের রুমে ঢুকে আত্মরক্ষা করতে হয় টিটিইকে। সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর বিষয় হলো অবৈধভাবে চড়াও হওয়া কলা ব্যবসায়ীরা বহাল তবিয়তে তাদের কলা নিয়ে ঠিকই আগরতলার রওনা দেয় একই ট্রেনে। অথচ টিটিই সাহেব ট্রেনে উঠার সাহস জোগাতে পারেননি। প্রানভয়ে তিনি মনু রেল স্টেশনেই থেকে যান। একজন টিটিই যেখানে নিজের আত্মরক্ষা করতে অক্ষম সেখানে সাধারণ যাত্রীদের নিরাপত্তা যে বিন্দুমাত্র নেই তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এখানে উল্লেখ্য এর আগেও একাধিকবার মনু স্টেশনে এমন ঘটনা ঘটে গেছে বলে জানা গেছে।বর্তমানে এই মনু স্টেশনে জিআরপিএফের দায়িত্বে থাকা বাবুদের দুর্বলতার কারনেই প্রতিনিয়ত একের পর এক ঘটনা ঘটে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। এ ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে অনেক অপ্রতিকর ঘটনা সাক্ষী হবে সাধারন মানুষ তা বলাই যায়। এবার কথা হচ্ছে, যে জনজাতিদের আলাদা রাজ্যের স্বপ্ন দেখান তথাকথিত বুবাগ্রা, সেই জনজাতিরা তো রাজধানীতে একদিন না এলে এখনো খালি পেটে ঘুমাতে হবে। তার উপর এতো স্পর্ধা। রেলে টিটিই সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী। তাকেই এভাবে নিগ্রহ করে অবৈধভাবে ট্রেনে চড়া জনজাতিরা, এটা কিছুতেই গ্রহন যোগ্য নয়। প্রতিদিন এই সমস্ত জনজাতিরা বিনে পয়সায় টিকিট ছাড়া রেলে করে, কাচাকলা,কলার মোচা,পেপে, লেবু ইত্যাদি সবজি নিয়ে এসে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার রাস্তা দখল করে দোকান নিয়ে বসে পড়ছে। মানুষও এই দোকান গুলিতে ভীর জমাচ্ছে, কিছু দাম কম পাবে আশায়। কিন্তু উপরন্তু আরো বেশী দাম দিয়ে সবজি কিনে নিয়ে রাজধানীবাসী। কেননা তারা যেখানে খুশি সেখানে রাস্তার পাশে বাজার সাজিয়ে বসে পড়ছে, মানুষও ভাবছে হাতের কাছে পেয়ে যাচ্ছি তাই নিয়ে নেই। আর এই সুযোগে পকেট কাটছে এই সমস্ত জনজাতি ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে স্থানীয় বাজার গুলিতে মার খাচ্ছে ব্যবসায়ীরা। দিনের পর দিন ক্রেতার সংখ্যা কমছে বাজার শেড গুলিতে। রাজধানীর আগরতলা রেলস্টেশনের বাইরে সিদ্ধি আশ্রম এলাকা, যোগেন্দ্রনগর বাইপাস, বিদ্যাসাগর ব্রীজের পাশে, মঠ চৌমুহনী, বিবিএম কলেজ রোড ইত্যাদি এলাকায় রাস্তা দখল করে বসছে এই জনজাতি ব্যবসায়ীরা। পুর নিগম স্থানীয় অভিযানে অভিযান করলেও এই সমস্ত রাস্তা দখলকারী জনজাতিদের বেলায় কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বিনে পয়সায় শহর দখল করে ব্যবসা করে আবার বিনা টিকিটে বাড়ি ফিরছে দিনের পর দিন। তারউপর এহেন হিংসাত্মক ঘটনায় সাধারন রেল যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হচ্ছে। এই বিষয়ে রেল দপ্তর, রেলওয়ে পুলিশ, রাজ্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে। যারাই এই ঘটনার সাথে যুক্ত রয়েছে প্রত্যেকের ছবি সামাজিক মাধ্যমে হু হু করে ঘুরছে। অতিসত্ত্বর কঠোর থেকে কঠোর আইনি পদক্ষেপ নিয়ে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী উঠছে। অন্যথায় আগামীদিনে আরও বড় সর কোনো ঘটনা সংগঠিত হতে পারে বলেও আশঙ্কা রেল যাত্রী সহ সাধারন মানুষের মধ্যে।